কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজার শহর ও পর্যটন এলাকায় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে ছিনতাই। ভোরে এবং সন্ধ্যার দিকে বেশিরভাগই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চলতি মাসে (ডিসেম্বর) কক্সবাজারের ১৬টি স্পটে ২৪টিরও বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সর্বস্ব হারিয়েছে অনেকেই। তবে ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছে গেলে হয় অভিযোগ, না হয় হারানো ডায়েরি করার পরামর্শ দেওয়া হয় ছিনতাইয়ের শিকার লোকজনদের।
ছিনতাইয়ের শিকার বাহারছড়া এলাকার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে হেঁটে বালিকা মাদ্রসা পয়েন্ট দিয়ে ওঠার সময় মাঝামাঝি স্থানে ৪-৫ জনের ছিনতাইকারী দলের কবলে পড়ি। ওই সময় ছিনতাইকারীরা আমাকে বেধড়ক মারধর করে নগদ ৩৩ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে মামলা করতে চাইলে থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা টাকা ও মোবাইল উদ্ধার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হারানো ডায়েরি করার পরামর্শ দেন। ১৫ ডিসেম্বর পুলিশের কথামত হারানো ডায়েরি করি (৯৪৮)। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশের কোনো কার্যক্রম দেখিনি।’
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা ছৈয়দ আবু মো. শাহাজান কবির বলেন, ‘ছিনতাই হচ্ছে না— এটা বলবো না। ছোটখাট কিছু ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তা সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখছি।’
এদিকে শহর ও পর্যটন এলাকার মতো রামু থানাধীন পর্যটন স্পট হিমছড়ি ও পেচাঁরদ্বীপ এলাকায়ও ঘটছে ছিনতাই ও ধর্ষণের চেষ্টার মতো ঘটনা। প্রতিনিয়িত সন্ধ্যা হলেই হিমছড়ির বিভিন্ন পয়েন্টে ঘটে পর্যটকদের সর্বস্ব হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা। পাশাপাশি বাদ যাচ্ছে না পর্যটন স্পট ইনানীও। সেখানেও হরদম লেগে আছে চুরি ও ছিনতাই।
তবে এ দুই থানার মতো কক্সবাজার শহর ও শহরকেন্দ্রিক পর্যটন এলাকায় ছিনতাইয়ের উপদ্রব খুবই বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহর ও পর্যটন এলাকার ১৬টি স্পটে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। সেগুলো হল পর্যটন এলাকার হিমছড়ি, ইনানী, সৈকতের সি-ইন পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, বাহারছড়ার জাম্বুর মোড ও হিল ডাউন, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের সামনে, লালদিঘীর পাড়ের বিহারি গলি, হাসপাতাল রোড, কালুর দোকান, বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দির এলাকা, খুরুশকুল রোডের রাস্তার মাথা, বিজিবি ক্যাম্পের পাশে নারিকেল বাগান, প্রধান সড়কের সাব-মেরিন ক্যাবল এলাকা, সিটি কলেজের সামনে, হাশেমিয়া মাদ্রাসা পয়েন্ট, কলাতলীর প্রধান সড়কের টিএন্ডটি অফিসের সামনে, আদর্শ গ্রামের প্রবেশের রাস্তার সামনে ও বাস টার্মিনালের উত্তরণ আবাসনের সামনে।
স্থানীয়দের দাবি, এসব স্পটে গত ২০ দিনে ২৪টিরও বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ৩ ডিসেম্বর শহরের সার্কিট হাউজ রোডে রাত ১১টায় রিক্সাবাহী সাগর ও নিলা নামের পর্যটক দম্পতিকে ছোরা ধরে নগদ ৭ হাজার টাকা, মোবাইলসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়া হয়। একইভাবে ৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় রামু থেকে মুরগি নিয়ে আনছার উল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী শহরের বড়বাজার যাওয়ার পথে বিজিবি ক্যাম্পের কাছে নারিকেল বাগান পয়েন্টে ৪-৫ জনের একদল ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ১৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। একই পয়েন্টে ৭ ডিসেম্বর রাত ১০টায় চট্টগ্রাম থেকে বাস টার্মিনাল নেমে টমটম যোগে শহরের আসার পথে সমিতিপাড়ার ব্যবসায়ী আবুল কালামকে ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোবাইল, নগদ প্রায় ৫ হাজার ৩০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
শহর এলাকার মতো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঝেঁকে বসেছে পর্যটন এলাকায়। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরেই ডায়াবেটিক পয়েন্ট, বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্টয়ে লেগেই রয়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত কয়েক দিনে ১০/১৫টিরও বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছে ঢাকার মালিবাগ এলাকার ব্যাংকার আরিফুল ইসলাম, খিলগাঁও তালতলা এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ও আবদুল খাইয়ুমের পরিবারসহ আরও অনেকেই।
লাবনী পয়েন্ট এলাকার ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান সোহেল বলেন, ‘পুলিশের অভিযানে সময় ছিনতাইকারীরা হাতেনাতে আটক হয়। কিন্তু বিভিন্ন নেতার তদবিরে তারা থানা থেকে বীরদর্পে বেরিয়ে যায়। যে কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। অরক্ষিত হয়ে যাচ্ছে পর্যটন এলাকা।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তাছাড়া পর্যটন এলাকায় যেসকল ছিনতাই গুলি হচ্ছে তাতে অধিকাংশ কক্সবাজার শহরের বাইরের যুবক রয়েছে। তারা পর্যটক সেজে কক্সবাজার এসে নানা অপকর্ম করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিনতাইকারী পুলিশের কব্জায় আসবে বলে জানান তিনি।’
পাঠকের মতামত: